সোমবার - ১০ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ২৭শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১১ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

উখিয়ায় বৌদ্ধ ভিক্ষুর উপর হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে মানববন্ধন

উখিয়ায় উপজেলাধীন পশ্চিম মরিচ্যা গ্রামে রাতের আধারে বয়োবৃদ্ধ শ্রাবস্তি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ধর্মজ্যোতি ভিক্ষু’র উপর দুর্বৃত্তের হামলা ও লুট-পাটের ঘটনায় প্রতিবাদ সভা এবং দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ উন্নয়ন সংস্থা (INTERNATIONAL BUDDHIST DEVELOPMENT ASSOCIATION)বাংলাদেশের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বুধবার (৫ জুলাই) বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সম্মুখে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন,২০২০ সালে ৯ জুলাই রাঙ্গুনিয়া মিথ্যা ধর্ম অবমাননার বিশৃঙ্খলা সাজিয়ে কারা বা কাদের মদতে জ্ঞানশরন বৌদ্ধ বিহারে হামলা ,লুটপাট চালায়, দখল করে এবং মন্দিরে অধ্যক্ষ , শরনংকর মহাথের কে হত্যার হুমকি প্রধান করেছিল। মন্দিরের ৬০ জন বৌদ্ধ সন্যাসীকে বের করে দেয় ও মন্দির দখলকরে।

শরনংকর মহাথের কে ২০২০সালে ৯ জুলাই থেকে ২০২২সালে ৩১আগষ্ট দুই বছর গৃহ বন্দী করে রাখে।এবং১৫টি মিথ্যা মামলা দেয়।ও দেশ ত্যাগে বাধ্য করে।এখন তিনি শ্রীলঙ্কায় অবস্থান করছে। ওনার শিষ্য ২০২০ সালে ১৩ সেপ্টেম্বর রাঙ্গুনিয়া জ্ঞানশরন বৌদ্ধ বিহারের সন্ন্যাসী রত্নাংকর ভিক্ষু ( ওপেল বড়ুয়া ) কে হত্যা করে স্হানীয় ক্ষমতাসীন এর কেডাররা। ও ২০২১ সালে নিরপরাধ বৌদ্ধ ভিক্ষু রাহুলংকর ভিক্ষুকে ১ মাস যাবত জেলবন্দী করে রাখে ক্ষমতাসীন । এবং ফলাহারিয়া গ্রমের প্রায় ৪০ জন নিরপরাদ বৌদ্ধ জনগনের উপর ৩০ টি মিথ্যা মামলা করে এসব জাতিসংঘের ওয়েবসাইট প্রতিবেদনে আছে ।
২০১২ সালে রামু ট্রাজেডি, যা পুরা বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। প্রায় ৩৬ টি বুদ্ধ মন্দির, ৩০০ টির অধিক বৌদ্ধ পরিবারে অগ্নিসংযোগ লুটপাট হত্যাসহ অত্যাচার চালায়।২০১৭ সালে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ঘর বাড়ি দখল করে মন্জু রানী বড়ুয়াকে হত্যা করা হয়। ২০১৯ সালে অমৃতানন্দ মহাথেরকে হত্যা করে কুমিল্লা গোমতী নদীতে ফেলে দেয়া হয় দুষ্কৃতিকারীরা।২০১৬ সালে রাঙ্গামাটি জেলায় উগাইন্ধা মহাথের ভিক্ষুকে হত্যা করা হয়।২০২১ সালে খাগড়াছড়ি তে বিশুদ্ধা মহাথের কুপিয়ে হত্যা করেছিলো। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম জুম্ম চাদিগাং বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু জ্ঞানজ্যোতি কে মধ্যরাতে ধারালো অস্ত্রে কুপিয়ে জখম করেন ওই এলাকার দুষ্কৃতকারী গং দ্বারা।২০১৯ রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়র রাজার হাট বাজারে বৌদ্ধদের দোকানসহ ১ একর জায়গা দখল করলেও এগুলোর কোনো সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে না।২০১৭ সালে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা, বিশুদ্ধানন্দ জ্যোতিপাল মৈত্রী বুদ্ধ বিহার ভাংচুর ও দখল করা হয়।এছাড়াও তিন পার্বত্য চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি,বান্দরবান, খাগড়াছড়ি তথা প্রতিনিয়ত হত্যা, জুলুম, উচ্ছেদ, ধর্মান্তরিত, ধর্ষণ চলমান আছে।যার কোনোটির সুষ্ঠু তদন্ত এবং এখনো দৃশ্যমান বিচার হয়নি।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের যথাযথ নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে না। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উপর হামলা ধারাবাহিক হলেও প্রশাসন নিরব ভূমিকায়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, যদি বয়োবৃদ্ধ শ্রাবস্তি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ধর্মজ্যোতি ভিক্ষু’র উপর দুর্বৃত্তের হামলার সুষ্ঠু বিচার না হয়। তাহলে বাংলাদেশে বৌদ্ধ সমাজ একটি দুর্বার আন্দোলন গড়ে দাবি আদায় করবে। এসময় বক্তার সরকারের কাছে এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জে বি এস আনন্দবোধি ভিক্ষুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন।

বিশেষ অতিথি ছিলেন, চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের আবাসিক প্রধান ও সংগঠনের উপদেষ্টা সদস্য প্রিয়রত্ন মহাথের , ড. দিপংকর স্থবির, যুগ্ম মহাসচিব প্রিয়বোধি স্থবির , নাগরিক ফোরামের মহাসচিব কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ বৌদ্ধ ফোরামের উপদেষ্টা সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া।

মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ বৌদ্ধ যুব পরিষদের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক বাবু তাপস বড়ুয়া ও জাতীয় কমিটির মহাসচিব প্রকৌশলী সীমান্ত বড়ুয়া,সঞ্জয় বড়ুয়া পিপলু, জনি বড়ুয়া, প্রকৌশলী সজন কান্তি বড়ুয়া, সংকর বড়ুয়া, দেবাশীষ বড়ুয়া সাজু, সজীব চৌধুরী সাজু,পিযুজ বড়ুয়া, অনুত্তর বড়ুয়া, মিলন কান্তি বড়ুয়া, অধ্যাপক শান্তপ্যদ বড়ুয়া, অধ্যাপক শিবু প্রসাদ শূর।

বৌদ্ধ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রুবেল বড়ুয়া, বাংলাদেশ সমাজ সংস্কারের সভাপতি বোধিপাল বড়ুয়া, শিক্ষিকা রুমা বড়ুয়া, সুহাস চৌধুরী টিটু, সঞ্জয় চক্রবর্তী মানিক,মানবাধিকার নেতা হাসান মুরাদ,বাবু গৌরব বড়ুয়া।আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশের মহাসচিব সত্যজিৎ বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরোও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা, মোস্তফা, সেকান্দর বেলাল,আতহার আলী,মোহাম্মদ আমিন প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত ২ জুলাই রাতের আঁধারে বয়োবৃদ্ধ শ্রাবস্তি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ধর্মজ্যোতি ভিক্ষু’র উপর দুর্বৃত্তরা হামলা করে।হামলায় ভিক্ষু গুরুতর আহত হন। আহত ভিক্ষু বর্তমান চট্টগ্রাম মেডিকেল মৃত্যুর শয্যায় পাঞ্জা লড়ছে।

 

এসআই/

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn