মঙ্গলবার - ১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ২৮শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১২ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামপুর থানার এসআই দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষগ্রহণের অভিযোগ

যে পুলিশ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। আমাদের ‘চোর’ বানিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে এসআই দেলোয়ার হোসেন। নির্দোষী হয়েও এখন কারাগারে যাওয়া লাগবো। সেই পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনেই আজ আমরা ‘চোর’ হলাম। আমরা এখন যাব কোথায়?

জামালপুরের ইসলামপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষগ্রহণ, আদালতে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করাসহ নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তোলেছেন এক কৃষক। ভুক্তভোগী ওই কৃষকের নাম শহিদুর রহমান। তিনি ইসলামপুর গোয়ালেরচর ইউনিয়নের মালমারা গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তার সরকারের ছেলে।
গত সোমবার (১ মে) বিকেলে আইনগত প্রতিকার চেয়ে জামালপুর পুলিশ সুপার, ইসলামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এবং স্থানীয় প্রেসক্লাব বরাবর ‘ইসলামপুর থানার এসআই দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ আদালতে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল প্রসঙ্গে’ বিষয়ভিত্তি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই কৃষক।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গোয়ালেরচর ইউনিয়নের মালমারা মৌজায় মালমারা গ্রামে ১৪ শতাংশ জমি দীর্ঘদিন থেকে ভোগদখল করে আসছেন শহিদুর রহমান। ওই জমিতে গত মৌসুমে সরিষা রোপন করেন তিনি। কিন্তু তাঁর জেঠাতো ভাইয়ের মেয়ে আঞ্জুয়ারা আক্তারের স্বামী পার্শ্ববর্তী আজিজুর রহমান আজিজ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাতের অন্ধকারে কাঁচা সরিষা তুলে নিয়ে যায় এবং জমি জবরদখলের পায়তারা করে। এ ব্যাপারে শহিদুর রহমান বাদী হয়ে জামালপুর নির্বাহী আদালতে গত ৪ জানুয়ারি ১১(১)২০২৩ নম্বর একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর আজিজ ও তার লোকজন শহিদুরকে হয়রানি করতে মিথ্যা অভিযোগ এনে আদালতে দুইটি মামলা করেন। শহিদুরের বিরুদ্ধে আঞ্জুয়ারা আক্তার বাদি হয়ে জামালপুরের ইসলামপুর আমলি আদালতে দায়েরকৃত ৭৪(১)২০২৩  নম্বর মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই দেলোয়ার হোসেন।

 তিনি ইসলামপুর পৌর শহরের পাটনীপাড়াস্থ গোয়ালেরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমের ভাড়া বাসায় গিয়ে এসআই দেলোয়ার হোসেন ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন শহিদুরের কাছে। এ সময় শহিদুর  এসআই দেলোয়ার হোসেনকে ১ হাজার টাকা দেন। আর বলেন গরিব মানুষ আর টাকা দিতে পারবেন না তিনি। বাকি টাকা না দিলে শহিদুরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে হুশিয়ারী দেন এসআই দেলোয়ার হোসেন।
শহিদুরের জমিতে রোপণকৃত কাঁচা সরিষা প্রতিপক্ষ আজিজ গং রাতের আঁধারে কেটে নিলেও দাবিকৃত ঘুষের ৩৯ হাজার টাকা না দেওয়ায় মামলার প্রতিবেদনে এসআই দেলোয়ার হোসেন উল্লেখ করেছেন, শহিদুরসহ তাঁর লোকজন নাকি আজিজের জমি থেকে সরিষা তুলে নিয়েছে।

অভিযোগে আরও উল্লেখ্য, ঘুষের টাকা না পেয়ে গত সপ্তাহে শহিদুরসহ তাঁর পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে ঢাহা মিথ্যা প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে এসআই দেলোয়ার হোসেন। উপরোক্ত বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ভুক্তভোগী কৃষক শহিদুরের।

ভুক্তভোগী কৃষক শহিদুর রহমান কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার জমি থেকে প্রতিপক্ষ সরিষা তুলে নিলেও ঘুষের দাবিকৃত টাকা না পেয়ে উল্টো আমাদের চোর বানিয়ে এসআই দেলোয়ার আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন। এখন আমাদের মিথ্যা প্রতিবেদনেই জেলহাজতে যেতে হতে পারে।’

অভিযুক্ত এসআই মো. দেলোয়ার হোসেন (০১৮৪০৮৬৪৯০৯) বলেন, ‘আমি দোষি নয়। অভিযোগ যে কেউ করতেই পারে। তবে আমি কোনো অন্যায় কাজ করিনি। যা করেছি, তা আইনসিদ্ধ।’

ইসলামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, ‘এসআই মো. দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুসারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn