দেশের আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি কক্সবাজারের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, ৭ দেশে তার সম্পদের তথ্য জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
দেশগুলো হলো- ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও কানাডা।
দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালে প্রদীপ ও তাঁর স্ত্রী চুমকিকে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার নোটিশ প্রদান করা হয়।
পরবর্তীতে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করা হয়। দুদকের অনুসন্ধানে চুমকির জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
তবে প্রদীপের কোনো সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। এরপর বিদেশে তার সম্পদ আছে কি-না তা জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে সাতটি দেশের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কাছে গত এপ্রিল মাসে চিঠি পাঠানো হয়।
আদালত সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক গত বছরের ২৭ জুলাই দুর্নীতির মামলায় প্রদীপকে ২০ বছর ও চুমকিকে ২১ বছর কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে প্রদীপের ঘুষের টাকায় চুমকির নামে নেওয়া কোটি টাকার বাড়ি, গাড়ি ও ফ্ল্যাট রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেন।
দুদকের মামলায় তাদের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল। প্রদীপ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে যে সম্পদ অর্জন করেছেন তা স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও ভোগ দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগপত্রে যেসব সম্পদের উল্লেখ করা হয় সেগুলো হলো- নগরীর পাথরঘাটায় একটি ছয় তলা বাড়ি, ষোলশহরে সেমিপাকা ঘর, ৪৫ ভরি সোনা, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস এবং কক্সবাজারে ফ্ল্যাট। নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন পাথরঘাটা এলাকার একটি ছয়তলা বাড়ি প্রদীপ কুমার দাশ ‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে অর্জিত অর্থ গোপন করার জন্য শ্বশুরের নামে নির্মাণ করেন বলে উল্লেখ করা হয়। পরে ওই বাড়িটি প্রদীপ দাশের শ্বশুর তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে দান করেন।
আয়কর রিটার্নে আসামি চুমকি কারণের কমিশন ব্যবসা এবং বোয়ালখালী উপজেলায় ১০ বছরের জন্য লিজ নেওয়া পাঁচটি পুকুরে মাছের ব্যবসার যে আয় দেখানো হয়েছে তাও স্বামী প্রদীপ দাশের জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জনের পর স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের উদ্যেশ্যে ভুয়া ব্যবসা প্রদর্শন করে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করে দুদক। মাছ চাষের ব্যবসার যে হিসেব দেখানো হয়েছে তার বাস্তবে অস্তিত্ব নেই বলে দুদকের তদন্তে উঠে আসে।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক মাহমুদ জানান, প্রদীপ একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে যে সম্পদ অর্জন করেছেন, তা স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও ভোগ দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন, এটা প্রমাণিত হয়েছে।
তবে প্রদীপের আইনজীবী সমীর দাশগুপ্ত দাবি করেন, প্রদীপের স্ত্রীর সব সম্পদ তাঁর শ্বশুরের কাছ থেকে পাওয়া। প্রদীপের নিজস্ব কোনও সম্পদ নেই।
বর্তমানে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার-৪ এ বন্দি প্রদীপ কুমার দাশ। আর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি।