শুক্রবার - ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

আশাশুনির মানিকখালি ব্রিজ পারাপারে অতিরিক্ত টোল আদায়

আশাশুনির মানিকখালি ব্রিজ পারাপারে অতিরিক্ত টোল আদায়

 

সাতক্ষীরার আশাশুনি মানিকখালী ব্রিজ পারাপারে অবৈধভাবে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
সড়ক বিভাগ টোল আদায়ের মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও কোন প্রকার সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না ইজারাদাররা। ফলে প্রতিদিন শতশত মোটরসাইকেল চালক ও যাত্রীসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালক হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। এতে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা-আশাশুনি-গোয়ালডাঙ্গা-পাইকগাছা সড়কের মানিকখালী ব্রীজের টোল আদায়ের জন্য মুক্তি কনট্রাকশনের সাথে সাতক্ষীরা সড়ক বিভাগের গত ২০২৪ সালের ১৪ জানুয়ারি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে উল্লেখ করা হয় ২০১৪ সালের টোল নীতিমালা অনুযায়ী টোল আদায় করতে হবে। সেই হিসেবে বড় বাস ৪৫টাকা, মিটি ট্রাক ৪০টাকা, কৃষি কাজে ব্যবহৃত যান ৩০টাকা, মিনি বাস ২৫ টাকা, মাইক্রোবাস ২০টাকা, চার চাকার যান ২০টাকা, তিন ও চার চাকার মোটরাইজড ৫টাকা, মটরসাইকেল ৫টাকা এবং ভ্যান-রিক্সা ও বাইসাইকেল ৫টাকা হারে টোল আদায় করবে।
কিন্তু ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ উক্ত চুক্তি অমান্য করে সড়ক বিভাগের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে জোর পূর্বক সংশোধিত টোল নীতিমালা ২০২৪ অনুযায়ী বেশি অর্থ আদায় করছে। টোল নীতিমালা ২০২৪ এখনও সরকার কর্তৃক অনুমোদন হয়নি। ইজারাদার গায়ের জোরে এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ে সাধারণ জনগনের কাছ থেকে বেশি হারে অর্থ আদায় করছে। ফলে জনভোগান্তিসহ অবৈধভাবে জনগনের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
সাতক্ষীরা শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক এলাকার মটরসাইকেল চালক হাসেম আলী বলেন, আমরা মটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে আশাশুনি, বড়দল, খাজরা, আনুলিয়া ও প্রতাপনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় যেয়ে থাকি। আগে মানিকখালিতে ব্রিজ না থাকার কারণে অনেক সময় নষ্ট হতো এবং কষ্ট সয্য করতে হতো। এই ব্রিজের কারণে আশাশুনির উপজেলার পাশাপাশি খুলনার কয়রা এবং পাইকগাছা উপজেলার মানুষের চলাচলের জন্য সুবিধা হয়েছে। এই ব্রিজ উদ্বোধন পর কোন টোল আদায় করা হতো না। পরে মটরসাইকেলের জন্য ৫টাকা করে টোল আদায় করা হতো। কিন্তু বর্তমান মটরসাইকেল ১০টাকা করে টোল নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টেও পর মনে করেছিলাম আর টোল আদায় করা হবে না। কিন্তু দেখলাম বিপরীত চিত্র। ৫টাকার বিপরীতে ১০টাকা করে টোল আদায় করা হচ্ছে। এটি আমাদেও চরম অন্যয় করা হচ্ছে। ব্রিজটি টোলমুক্ত ঘোষণার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
গোয়ালডাঙ্গা এলাকার আকরাম হোসেন বলেন, আগে মোটরসাইকেলে টোল ছিলো ৫টাকা করে। এখন যাওয়া এবং আসা ১০টাকা করে ২০টাকা নিচ্ছে। বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ সকল যানবনের আগের টোলের ডাবল নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার ফারুক বিল্লাহ বলেন, সর্বশেষ ইজারা দেওয়ার আগে এই অঞ্চলের মানুষ টোল আদায় বন্ধের দাবীতে ইউএনও এবং ডিসি স্যারের কাছে গণ স্বাক্ষর জমা দেন। কিন্তু বন্ধ না করে নতুন অর্থবছরে দ্বিগুন হারে টোল আদায়ের কারা হচ্ছে। এতে অন্তর্বতীকালীন সরকারের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে নষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে টোল মানিকখালী ব্রিজের টোল দেওয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। জলবায়ু পরির্তন জনিত কারণে প্রতিবছর একাধিক দুর্যোগের পড়ে এই উপজেলার মানুষ। দুর্যোগকবলিত মানুষের কথা বিবেচনা করে মানিকখালী ব্রিজটি টোলমুক্ত ঘোষণার দাবি করছি।
এ বিষয়ে জানতে সাতক্ষীরার মুক্তি কনস্ট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী মাহমুদ হাসান মুক্তির ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষ্ণা রায় বলেন, মানিকখালি ব্রীজে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে আমার কাছে অনেকে অভিযোগ করেছে। বিষয়টি আমাদের হাতে না। সড়ক বিভাগের ব্যাপার আমি এই বিষয়ে তাদের অবহিত করেছি।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার পারভেজ বলেন, ১কোটি ২৬ লাখ ২৫হাজার টাকায় মানিকখালী ব্রিজের টোল আদায়ের জন্য মুক্তি কনস্ট্রাকশনের সাথে সাতক্ষীরা সড়ক বিভাগ গত ২০২৪ সালের ১৪ জানুয়ারি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে উল্লেখ করা হয় ২০১৪ সালের টোল নীতিমালা অনুযায়ী টোল আদায় করতে হবে। কিন্তু টাকা থেকে আমাদেও অনুমোদনের যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল সেখানে ভুল ক্রমে ২৪ সালের নীতিমালার কথা বলা হয়েছে। পরে সেটার সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠি আমার অফিসে দেওয়া হয়েছিলো। এই চিঠি ঠিকাদারদের কোন কিছু না। কিন্তু ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ উক্ত চুক্তি অমান্য করে সড়ক বিভাগের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে জোরপূর্বক সংশোধিত টোল নীতিমালা ২০২৪ অনুযায়ী বেশি অর্থ আদায় করছে। টোল নীতিমালা ২০২৪ এখনও সরকার কর্তৃক অনুমোদন হয়নি। ইজারাদার গায়ের জোরে এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ে সাধারণ জনগনের কাছ থেকে বেশি হারে অর্থ আদায় করছে। ফলে জনভোগান্তিসহ অবৈধভাবে জনগনের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে যা একপ্রকার চাঁদাবাজি করার সামিল।
তিনি আরও বলেন, এই বিষয়টি আমি ইজারাদারকে ডেকে নিষেধ করেছি। তখন তিনি ২০১৪ সালের টোল নীতিমালা অনুযায়ী টোল আদায় করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। পরে হাইকোর্ট থেকে একটি রায় নিয়ে এসে অতিরিক্ত টোল আদায় করছেন। এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডারকে জানিয়েছি। বিষয়টি কোর্টের মাধ্যমে ফেস করে বিষয়টি সমাধান করবো। মানুষের সাথে এভাবে অন্যায় করে গেলে প্রয়োজনে তার ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেব।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn