
আমার_দেবী
১ম পর্ব
তৌহিদা হানফি মাহমুদ
আজ তোমার কয় নাম্বার কেমো গেলো?
কেমন লাগছে জানতে চাই না।শুধু জানতে চাই যুদ্ধটা চালিয়ে যাবার শক্তি আছে তো ?ছোট থেকে শুনে বড় হয়েছি কার্মা বা কর্মফল সবাইকে ভোগ করতে হবে ।তোমার বেলায় কি হলো ? বলতে পারো ? তুমি কেন এতো অসহ্য ভালো । আমার তো তোমাকে বোকা মনে হয় ।তোমাকে দেখলে আমার যত না কষ্ট হয় তার চাইতে বেশী ক্ষোভ হয় ।ইচ্ছে করে তোমাকে জাদু করে একটা কঠিন মানুষ বানিয়ে ফেলি।কেন তোমার চোখে দুনিয়ার তাবৎ মানুষ ভালো।তোমার ধারনা কেউ ইচ্ছে করে অন্যায় করে না সবকিছুর পেছনে কারন থাকে।তোমার এই কথাটা শুনলেই আমার মাথা গরম হয়ে যায়,চাঁদি জ্বালা করে ।
কি পেলে জীবনে ?
নদী রহমান-আমার দেখা পৃথিবীর সেরা মানুষদের একজন ।আমি যখন স্কুলে পড়ি তার সাথ পরিচয় হয়।আমার বড় বোনের বান্ধবী । প্রাণবন্ত একটা মেয়ে।লম্বা কালো দুই বেনী করা ,একটু শ্যামলা মত,ছিপছিপে গড়ন। গভীর দুটো চোখ।দারুন ঝকঝকে দাঁত। মনে হয তার জন্ম হয়েছে মিষ্টি করে দাঁত দেখিয়ে হাসার জন্য । বয়স ১৬/১৭ হবে । আমার বোনের তখন তেমন বয়স আমি ওদের চার বছরের ছোট । স্কুলে পড়ি একটু বড় ক্লাসে ।মানে অষ্টম শ্রেনীতে।বোনের কলেজ দেখার খুব ইচ্ছে আমার।অনেক অনুরোধ করাতে কলেজের বাৎসরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়ায় আমাকে নিয়ে গেছিলো।তখন অনেক বড় লেগেছিল কলেজটা ।কত ছাত্রী, কি মজার জীবন তাদের ।সবাই শুধু কথা বলে চলেছে । ক্লাসের বাইরে অনেকে আড্ডা দিচ্ছে।ভাঙ্গা পরিত্যক্ত হাল্কা নীল রঙের একটা বাসে ৪/৫ জন মেয়ে বসে ওখানেও আড্ডা দিচ্ছে।কোন দিদিমনি বা বড়আপা কাউকে বকা দিচ্ছেনা । সেদিন বুঝেছিলাম বড়বোন কেন বলতো “কলেজের ফার্স্ট ইয়ার ডোন্ট কেয়ার”..
কলেজের ক্যান্টিনে ২ টাকার আলুর চাপ আর সিঙ্গারা দেখে আমি বিস্মৃত হয়েছিলাম ।কত ছাত্রী উচ্চস্বরে গল্প করছে আর ছোট কাপে চা সাথে সেই বিস্ময় চপ ও সিঙ্গারা খাচ্ছে।
কলেজের বড় গেইটের সামনে চটপটি বিক্রি হচ্ছে একটা চটপটি ভ্যানে । সবাই তাকে দুলাভাই ডাকছে ।সেই চটপটি দুলাভাই হাসি মুখে পান চিবাতে চিবাতে সবাইকে চটপটি প্লেটে করে বানিয়ে দিচ্ছে ।আমি আশ্চর্য চোখে দাঁড়িয়ে দেখলাম । কি ভাবে সে হিসাব রাখছে -কারটা আগে আর কারটা পরে বা টাকার হিসাব কিভাবে রাখছে।সেই সময় তাকে আমার পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাবী মানুষ মনে হয়েছিল ।
যাই হোক ,আমি যেদিন কলেজে যাই বোনের অনেক বান্ধবীর সাথে দেখা হয় । সবাইকে কমবেশী চিনতাম । কিন্তু নদী আপাকে সেদিন প্রথম দেখলাম।হাতে এক প্লেট চটপটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । ঠোঁটে বিজিতার হাসি । চরম ভিড়ে যুদ্ধ করে সে এক প্লেট চটপটি উদ্ধার করেছে । আমাকে দেখে প্লেটটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো
—নাও চটজল্দি খেয়ে নাও। দারুন মজার চটপটি । দুলাভাই ছাড়া এমন মজা করে কেউ বানাতে পারেনা ।
আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম একটা অপরিচিত মেয়ে আমার মনের কথা কেমন করে বুঝলো ! নাকি আমি লোভী দৃষ্টিতে চটপটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম তাই দয়া করে কিনে দিয়েছে
সে আমাকে তাড়া দিয়ে বললো
—-নাও ধরো । আমি তোমার বড় বোনের বান্ধবী। আজকে প্রথম দেখা । তুমি খুব সুন্দর । ইস আমার যদি তোমার মত একটা ছোট বোন থাকতো ।
আমার তাকে প্রথম দেখায় খুবই ভালো লেগে যায়। তখন আমি খুবই কম কথা বলতাম । কিন্তু মনে মনে অনেক বাঁচাল ছিলাম । আমার ইচ্ছে হলো তার ছোট বোন হয়ে যাই । কিন্তু মুখে বলতে পারলাম না । শুধু বললাম
—আপনি কেমন করে বুঝলেন ? ..
সে মহা জোরে হেসে একহাতে প্লেট আর অন্য হাতে আমাকে টেনে কাছে বসিয়ে বললো ।
—আমাকে আপনি বলবা না । আমার নাম নদী । আমাকে নদীপু ডাকবা না ।অন্য যা কিছু হয় তাই ডেকো । আজ থেকে আমরা বোন ।
আমার যে কি ভালো লেগেছিলো সেদিন । মনে হচ্ছিলো একটা স্বপ্নের মত দিন কাটছে ।সেদিন থেকে আমি হয়ে গেলাম তার পুটুশ আর সে আমার বুবুন।তারপর আমি আর বুবুন খুব আপন হয়ে গেলাম ।আমার বয়ঃসন্ধি কালে সে ছিল শিক্ষক,গুরু ও গাইড।ছোট্ট মনের সব কষ্ট সে এক ঝটকায় গায়েব করে দিতে পারতো।
আজ কেন আমি পারছি না তার কোন কষ্ট গায়েব করতে?কেন আমি তার থেকে পালাচ্ছি । সারাদিনের বেশীর ভাগ সময় তার কথা ভাবি । কিন্তু সাহস করে কাছে যেতে পারছিনা ।
এ আমি কেমন আমি ! আমিতো প্রতিজ্ঞা করেছিলাম বুড়ো বয়সটা আমরা একসাথে কাটাবো ।
কেন তোমার সাথে এতো অন্যায় হচ্ছে । আমি কার কাছে বিচার চাইবো ।কাকে দোষী করবো । তোমার ভালত্ব ,তোমার সরলতা ,তোমার বিশ্বাস নিয়ে যে খেলা করলো-
কেমন আছে সে ?
জানতেও ইচ্ছে করেনা ঘৃণায় ।
তবুও আমি জানতে চাই ।
(চলবে)
তৌহিদা_হানফি_মাহমুদ
টরন্টো
বড় গল্পটা শেষ করতে পারিনি । এবার সত্যিই শেষ করবো । তাই যারা পড়েননি তাদের জন্য প্রথম থেকে দিলাম । সাথে থাকবেন…
বি: দ্র: লেখা টা তৌহিদা হানফি মাহমুদ এর পেইজ থেকে নেওয়া।