দেশের অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল ও সেবা কেন্দ্রগুলোর চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আচরণ যেন লাগামহীন।তাদের দাপটের কাছে অসহায় সাধারণ মানুষ।চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব বাকলিয়া ১০ শয্যার মা ও শিশু কল্যাণ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী শাহ আলমের লাগাম যেন অনেক উর্ধ্বে।রোগীর স্বজনদের সাথে অমানবিক আচরণ,চেচামেচি,সেবাগ্রহীতাদের সাথে রুট ব্যবহার,নিয়ম বহির্ভূত লুঙ্গি পরিধান করে অফিস করা সহ নানা অপরাধ চোখে পড়ে।
সোমবার (২৯মে) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পূর্ব বাকলিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে অবস্থান করলে এসব অপরাধ নজরে আসে।
সকাল থেকে সেবা নিতে আসা রোগী এবং রোগীর স্বজনদের সাথে আলাপন দেখে মনে হবে যেন কোন সেবাদাতা নয় বরং শাসকের চেয়ারে বসে বিচার করছেন শাহ আলম।রোগীদের সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বলা সহ তথ্য চাওয়ার ক্ষেত্রে এক বারের জায়গায় দুইবার বলার প্রয়োজন হলেই আক্রমণাত্মক আচরণ করে শাহ আলম।চিৎকার চেচামেচি ছাড়া যেন কথায় বলতে নারাজ তিনি।শুধু এখানেই শেষ নয়,রাত সাড়ে ৯ টার সময় ওয়ার্ডের বাহিরে অবস্থান করা রোগীর স্বজনদের কর্কশ ভাষায় কথা বলে গা ধাক্কা দিয়ে নিচে নামিয়ে দেয় শাহ আলম।এসময় রোগী দেখতে আসা কলেজ পড়ুয়া দুই ছাত্রী নিচের তলার সাধারণ মানুষ বসার জায়গায় অবস্থান করলে শাহ আলম তাদের থেকে কোন রোগীর লোক জিজ্ঞেস করে।রোগীর নাম বলার পরেই তাদের সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বলা সহ চিৎকার চেচামেচি করতে থাকেন এই কর্মচারী।যা ফ্লোরের অনেকদূর থেকেও স্পষ্ট শুনা যায়।এসময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা এমন ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে তার সাথেও করে বাজে আচরণ।তিনি বুঝাতে চান,এখানের সবকিছু তার দাপটেই চলে,তাকে কিছু বলার সাহস কারো নেই।এই সুযোগে নিজের পক্ষে গাইতে হাত করে নেন বাঁচাল টাইপের এক মহিলা রোগীর স্বজনকে।দেখা যায় রাত ১২ টার পরেও নিচের ফ্লোরে নেমে ওয়ার্ডের অন্যান্য রোগীদের বিরুদ্ধে নালিশ দেয় শাহ আলমকে। রোগীর স্বজনদের সাথে এমন আচরণ ও রোগীর ওয়ার্ডের সামনে চিৎকার করে কথা বলতে দেখা যায় আরো বেশ কয়েকজন মহিলা নার্সকে।যেখানে ওয়ার্ডের সামনে উচ্চস্বরে কথা বলা নিষেধ বলে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সেখানে তাদের চিৎকার যেন সেই নোটিশকে তোয়াক্কাই করে না।তবে বেশ কয়েকজন শান্তশিষ্ট নার্সের রোগীদের সেবার প্রতি যথেষ্ট সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়।
হাসপাতালের দেওয়ালে দেওয়ালে টাঙানো জরুরি সেবার হট লাইন নাম্বারে বেশ কয়েকবার কল করলে বন্ধ পাওয়া যায় নাম্বারটিও।খারাপ ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষকে জানানোর নোটিশ টাঙানো হলেও উল্লেখ নেই অভিযোগ করার কোন মাধ্যম,যোগাযোগ নাম্বার কিংবা অভিযোগ বক্স।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মুনিফা সোলতানা বলেন, আমি নিচে চেয়ারে অবস্থান করছিলাম।তিনি আমাদের রোগীর নাম জিজ্ঞেস করার পর হঠাৎ কর্কশ ভাষায় কথা বলতে থাকে।এমনকি আমরা বেরিয়ে এলেও চিৎকার করে একেরপর এক বড় কথা বলে যায়।
সেবা নিতে আসা আরেকজন জানান, এখানের চিকিৎসা সেবা অনেক ভালো।খুব বেশি প্রয়োজন না পড়লে তারা সিজারও করান না।প্রায় সময় নরমাল ডেলিভারি হয়।তবে এখানকার কিছু কর্মচারীর আচরণ অনেক বেশি খারাপ।
এদিকে পরিচয় গোপন রেখে অভিযুক্ত কর্মচারী শাহ আলমকে এমন খারাপ আচরণের কারণ জানতে চাইলেই সে রেগে গিয়ে বলে, এটা আমার ডিউটি।আমার কাজ এভাবে বের করা।কর্কশ আচরণ তো নিয়মবহির্ভূত,অভিযোগ দিলে কি করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সরকারি চাকরি করি।আমার ক্ষমতা কম নাকি?
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক মোঃ আবুল কালাম জানান, এমন আচরণ করার সুযোগ নেই।সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসারের মাধ্যমে কালকের মধ্যেই অভিযুক্ত কর্মচারীর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতেছি।