শনিবার - ২২শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২২শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

আগামী ১৫ দিনের মধ্যে চাকুরিহারাদের স্ব-পদে বহালের দাবী, অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারি

ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’র কর্মরত ৫৪৫ জন চাকুরিহারাদের সংবাদ সম্মেলন
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে চাকুরিহারাদের স্ব-পদে বহালের দাবী, অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারি

 

ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’র কর্মরত ৫৪৫ জন ট্রেইনি জুনিয়র অফিসার, ট্রেইনি সহকারী অফিসার, ট্রেইনি সহকারী ক্যাশ অফিসারকে চাকুরিবিধি অনুসরণ না করে চাকুরিচ্যুত করার প্রতিবাদে এবং পুনরায় চাকুরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে এক সংবাদ সম্মেলন আজ ৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় নগরীর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, অন্যায়ভাবে এবং ব্যাংকিং ও চাকুরিবিধি অনুসরণ না করে আমাদের চাকুরিচ্যুত করেছে আমাদের কর্মরত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। যেকোন চাকুরিজীবির চাকুরি যাওয়ার বা চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুনির্দ্দিষ্ট বিধি বিধান রয়েছে। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’র কর্মরত চাকুরিজীবি হিসেবে আমাদেরও চাকুরিচ্যুত করার বিধি বিধান রয়েছে। কিন্তু আমাদের কর্মরত প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কোন বিধি অনুসরণ না করেই বিনা কারণে প্রতি দিনের মতো কর্তব্যরত অবস্থায় অফিস কার্যকাল শেষ হওয়ার পূর্ব মুহুর্তে আমাদের ৫৪৫ জনকে চাকুরিচ্যুতির নোটিশ ধরিয়ে দেয়। এটি একটি চকুরিরত কর্মচারীর সাথে চরম অন্যায় ও অবিচারের সামিল।
তারা আরো বলেন, আমাদের চাকুরিহারার প্রেক্ষিতে চাকুরি পুর্নবহালের দাবীতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাননীয় গভর্ণরের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে আমাদের ৫৪৫ জনকে পুনরায় স্ব-পদে চাকুরিতে বহাল করার দাবীতে ১৫ দফা দাবী পেশ করছি। আমাদের দাবী সমূহ: (১) বিনা অপরাধে ও বিনা নোটিশে চাকুরিবিধি অনুসরণ না করে আমাদের ৫৪৫ জন কর্মরত ট্রেইনি জুনিয়র অফিসার, ট্রেইনি সহকারী অফিসার ও ট্রেইনি সহকারী ক্যাশ অফিসারকে স্ব-পদে পুনবহাল করতে হবে। (২) বর্তমান ম্যানেজমেন্টের অনিয়ম তদন্তপূর্বক বিচারের আওতায় আনতে হবে। কারণ তারা বিনা নোটিশের মাধ্যমে কর্মরত ৫৪৫ জন চাকুরিরত ট্রেইনি জুনিয়র অফিসার, ট্রেইনি সহকারী অফিসার ও ট্রেইনি সহকারী ক্যাশ অফিসারকে চাকুরিচ্যুত করেছে। (৩) ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের চাকুরি যাবে না বলিয়া নিয়মিত ১৪ বা ১৫ ঘন্টা কর্মঘন্টা খাটানোর পাশাপাশি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও অফিস এবং বাধ্যতামূলক মার্কেটিং করিয়ে মিথ্যা আশ্বাসের বুলি দিয়ে প্রতারণাপূর্বক আমাদের চাকুরিচ্যুত করেছে। এর দায়ভার বর্তমান ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। (৪) আমাদের দ্বারা ইচ্ছেমত বাধ্য করে ওয়াক্ফ নামে একাউন্ট খোলা হয়েছে। যেখানে জন প্রতি এক হাজার, দুই হাজার, তিন হাজার থেকে শুরু করে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদাবাজি করা হয়েছে। এই ওয়াক্ফ একাউন্টের উত্তোলনকৃত বা সংগ্রহ করা চাঁদাগুলো কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে তা জনসম্মুখে আনতে হবে। ইসলামী শরীয়া ভিত্তিক ব্যাংকে জোর করে দানের টাকা আদায় করা যায় কিনা সেটি জাতি জানতে চায় (৫) ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ১০ তারিখে আমাদের বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলে বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান স্যারের বই কেনার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হয়। বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষার দিন তারিখ ঘোষণা করা হলেও তা গত ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষার দিন তারিখ প্রকাশ করা হলেও কিন্তু পরীক্ষার দুই দিন পূর্বে পরীক্ষা হবে না বলে একটি মেইল দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি অত্যন্ত রহস্যজনক ও দুঃখজনকও বটে। (৬) বিগত ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ বৃহস্পতিবার আমাদের কর্মঘন্টার শেষ মুহুর্তে কোন বিধি বিধান অনুসরণ না করে সরাসরি আমাদেরকে ব্যাংক সেবা থেকে অব্যাহতি দিয়ে চাকুরিচ্যুত করে। চাকুরি বিধি অনুসরণ না করে চাকুরিচ্যুত করা একটি চরম অন্যায় ও অপরাধের সামিল। দ্রুত এই কর্তৃপক্ষকে আমাদের চাকুরি ফিরিয়ে দিতে হবে। (৭) পরীক্ষাবিহীন আমাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে ব্যাংকের সেবা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ বা শতভাগ মিথ্যা। আমরা সকলে অনলাইনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক অনুসরণ করে আবেদন করি এবং পরবর্তীতে ব্যাংক বিধি অনুসরণপূর্বক বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণপূর্বক উর্ত্তীণ হয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার প্রাপ্তির মধ্যদিয়ে চাকুরিতে যোগদান করি। এই বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য জাতিকে জানাতে হবে। (৮) আগষ্ট থেকে ডিসেম্বর আমাদেরকে আর্থিক তারল্যসংকট মোকাবেলায়, গ্রাহকদের হুমকি, গায়ে হাত তুলা সহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে অফিস করেছি, ম্যানেজার ও ২য় ম্যানেজার কেউ শাখায় থাকত না আমাদেরকে অপমানিত হয়ে গ্রাহকদের বুঝাতে হত, এত কিছু পর ও নতুন চেয়্যারমান দায়িত্ব নেওয়ার পর বলছিল, কাউকে ছাটাই করা হবে না বরং জনশক্তিতে রুপান্তর করবে কিন্তু তিনি তার কথা রাখেন নি। (৯) গত কিছু দিন আগে বর্তমান ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পি এল পি এর চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান স্যার চট্টগ্রাম নেভী কনভেনশন হলে বিজনেস মিটিং এ বলেছিলেন তিনি কারো প্রতি জুলুম করবে না, তিনি বলেছিলেন সবাইকে মন দিয়ে কাজ করেন, এটা আমাদের ঘুরে দাড়ানোর সময় এমনটা আশা দিয়েছিল কিন্তু তিনি তার কথা টি রাখেন নি। (১০) বর্তমান ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এর চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান স্যার এটিএন বাংলা চ্যানেলে বলছিল, কারো রিজিক নিয়ে কাড়াকাড়ি করার মন মানসিকতা ওনার নাই, প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলবে, কেউ মেধাশূন্য নয় তাদের ভিতর একটা প্রতিভা আছে তা বের করে এনে কাজ লাগানোর সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলে আমাদের রিজিক কেড়ে নিলো কেন? (১১) আবু রেজা মোঃ ইয়াহিয়া ভারপ্রাপ্ত এমডি হয়ে বলেছিল, কারো প্রতি জুলুম হবে না আপনারা মন দিয়ে কাজ করেন, কারো চাকরি নিয়ে সমস্যা হবে না, আমাদের তো চুক্তিতে নিয়োগ হয়নি, যদি চুক্তিতে হত তাহলে ২০১৭ সালের ব্যাংকবিধিমালা আইনের ১৮ নং ধারায় বলা হয়েছিল, কাউকে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়ে অব্যহতি দিতে হলে ১৯৭৪ সালের গণকর্মকর্তাও অবসর আইন অনুসারে হতে হবে, এমন নিয়ম তো তারা মানেনি। (১২) বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ বিধি ২০২২ সালে বলেছিল, কাউকে কোন অপরাধ বা অন্যায় করলে প্রমাণ হলে পদন্নোতি হবে না এমনটা বলা হয়েছিল, টারমিনেট করার কথা কোথাও ছিল না। আর তা ছাড়া আমরা কোনো অন্যায়, অপরাধ করি নি তাহলে আমাদেরকে টারমিনেট কেন করা হলো? (১৩) আমরা তো কেউ দৈনিক ভিত্তিক কর্মজীবী ছিলাম না, আমরা রেজিস্টার ভুক্ত বাংলাদেশের স্বনামধন্য ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’র কর্মচারী ছিলাম। আমাদের যদি চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয় তাহলে আমাদের দিয়ে ওনার নিজের লেখা বইয়ের ব্যবসা কেন করা হলো? (১৪) আমাদের যদি চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার ইচ্ছাই থাকে তাহলে ওয়াক্ফ একাউন্ট এর নামে আমাদের থেকে এতো টাকা কেন নেওয়া হলো? (১৫) কোন কারণহেতু বিনা নোটিশে আমরা চাকরিহারা হওয়ার ফলে আমরা মানবেতর দিন যাপন করছি। আমাদের বৃদ্ধ মা-বাবাদের নিয়ে এবং পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যাওয়া দুর্ভিসহ হয়ে উঠেছে। তারা আরো বলেন, অনেকের বয়বৃদ্ধ পিতা মাতা ছেলেদের চাকুরিহারার সংবাদে নানা জটিল কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও পরিবার পরিজনের সদস্যরাও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। আরও দুঃখজনক যে আমাদের অনেকের ছেলে-মেয়ে কর্মস্থলের কাছে স্কুল মাদ্রাসায় ভর্তি থাকায় তাদের শিক্ষাজীবন চালিয়ে যাওয়া নিয়ে চরম সংকটে পড়েছি। বিষয়গুলো আমাদের নানা ভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। আমরা বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাননীয় গভর্ণরের কাছে আমাদের চাকরিহারা ৫৪৫ জনকে পুনরায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সিএলসি’র স্ব-স্ব পদে পুনর্বহাল করার দাবী জানাচ্ছি। লিখিত বক্তব্যে তারা আরও বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পুর্নরায় তাদের স্ব-পদে পুর্নবহাল না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মানবিক দিক বিবেচনায় বিনা কারণে চাকুরিচ্যুত ৫৪৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্ব-পদে পুনবহাল করে স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা ফিরিয়ে দেবে।
সংবাদ সংম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ট্রেইনি সহকারী অফিসার ইমতিয়াজ মাহমুদ। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন মো. জয়নাল আবেদীন, মো. গাজী আব বক্কার ফাহিম, মো. আবু তালেব, মো. হেলাল উদ্দিনসহ প্রায় শতাধিক চাকুরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলন শেষে ১৫ দফা দাবীতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন পালন করেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn